লাকসাম উপজেলা:
"লাকসাম"
বাংলাদেশের
চট্টগ্রাম
বিভাগের
কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত
একটি
উপজেলা । কুমিল্লা সদর থেকে মাত্র ২৯ কিঃ মিঃ দক্ষিণে ডাকাতিয়া
নদীর
তীরে
এক
মনোরম
পরিবেশে
এ
উপজেলা
সদর
টি
অবস্থিত। বর্তমানে
লাকসাম
একটি
প্রথম
শ্রেণীর
পৌরসভা। লাকসাম
শহরটি
বাণিজ্যিক
শহর
হিসেবে
পরিচিত। বাংলাদেশের
বৃহৎ
পাঁচটি
রেলওয়ে
জংশনের
মধ্যে
একটি
এখানে
অবস্থিত। লাকসাম
থানাকে
উপজেলায়
রুপান্তর
করা
হয়
১৯৮২
সালে।
অবস্থান
কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত
লাকসাম উপজেলাটির
আয়তন ৪২৯.৩৪ বর্গ
কিলোমিটার । উত্তরে কুমিল্লা সদর
। দক্ষিণে
চাটখিল
, বেগমগঞ্জ
আর সেনবাগ
। পূর্বে
নাংগলকোট
আর চোদ্দগ্রাম
উপজেলা ।
সর্বশেষ পশ্চিমে
শাহারাস্তি
উপজেলা দ্বারা
লাকসাম উপজেলাটি
পরিবেষ্টিত ।
প্রশাসনিক এলাকা
নির্বাচনী এলাকা:
২৫৭ কুমিল্লা-০৯
,লাকসাম উপজেলাতে ১টি
পৌরসভা
ও ৭টি ইউনিয়ন পরিষদ
, ১৬৭টি মৌজা বিদ্যমান। পৌরসভার নাম
লাকসাম পৌরসভা। বাকি
ইউনিয়ন
পরিষদগুলো হচ্ছেঃ
- মুদাফ্ফরগঞ্জ
- কান্দিরপাড়
- গোবিন্দপুর
- উত্তরদা
- আজগরা
- লাকসাম পূর্ব ।
- বাকই
অন্যান্য; সরকারি
হাসপাতালঃ ০১টি (৫০
শয্যা বিশিষ্ট) স্বাস্থ্য কেন্দ্র/ ক্লিনিকঃ ০৩টি
কমিনিটি ক্লিনিক: ০৭টি
পোষ্ট অফিস: ০১টি,
সাব-পোষ্ট অফিসঃ
৩টি
জনসংখ্যা
জনসংখ্যা ২,৭৬,১৭৬ জন
(২০০১ সালে
আদম শুমারী
অনুযায়ী) পুরুষ: ১,৩৭,৯৭০
জন , মহিলা:
১,৩৮,২০৬ জন। জনসংখ্যার
ঘনত্ব: ১৮১৬
জন (প্রতি
বর্গ কিঃমিঃ)
উপজেলার ইতিহাস এবং ঐতিহ্যঃ
এ উপমহাদেশে একমাত্র নারী নবাব মুসলিম জমিদার ফয়জুনেণসার অমর স্মৃতি বিজরিত স্থান তৎকালীন মোহনাবাদ পরগণার পশ্চিমগাঁও এলাকাটি লাকসাম উপজেলায় অবস্থিত। ঐতিহাসিকভাবে নানা কারণে লাকসাম উপজেলার খ্যাতি রয়েছে। ১৮৮৩ সালে এদেশে যখন বৃটিশ সরকার রেল লাইন স্থাপন করেন তখন দৌলতগঞ্জের উত্তরাংশে উচ্চ ভূমিতে রেলওয়ে জংশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। বড়তুপা মৌজাতে যে, রেলওয়ে জংশনটির গোড়া পত্তন হয় উহার নামই হলো লাকসাম রেলওয়ে জংশন।লাকসামের আরো কিছু বিখ্যাত স্থানঃ
নবাব ফয়জুন্নেছা হাউজ
১। নওয়াব
বাড়ী বর্তমানে
নাবাব ফয়জুন্নেছা
হাউজ নামে
পরিচিত ২।
দিশাবন্ধের নবীসুর মসজিদ ৩।গাইনের ডহরা
৪। পশ্চিমগাঁও
কাজী মসজিদ
৫। গাজীমুড়ার
করিম হায়দার
দরগাহ ৬।লাকসাম
উত্তর বাজার
জামে মসজিদ
৭।জমিদার অতুল
কৃষ্ণ রায়
চৌধুরী বাড়ী
বর্তমান মৈশান
বাড়ীবাড়ী নামে পরিচিতি ৮।মোহমত্ম বাড়ী
৯। নরপাটি
ভেলুয়া সুন্দরী
বাড়ী ১০।গুম্বজ
মসজিদভাষা ও সংষ্কৃতি
এই বৃহত্তর লাকসামের রয়েছে বিরাট একটা ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বলয়। লাকসামের গর্ভের ধন নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী সর্বপ্রথম ’’রুপজালাল ’’ কাব্য লেখেন। বঙ্কিমচন্দ্র ও মীর মোশাররফের আমলে যা কখনও কল্পনা করা যায়নি, তা ফয়জুন্নেছার লেখায় সম্ভব হয়েছে। গীত লিখেছেন তিনি। প্রচুর গীত কবিতার সমন্বয়ে লিখেছেন ’’সংগীত লহরী’’। সাংস্কৃতিরই একটি বিশেষ অংশ সংগীত। তিনি লিখেছেন বারমাসী যা ছিল এমনরুপঃ-বিয়ের গান-
প্রথমে প্রভূকে স্মরি
হাত মুখ ধৌত করি
পরে করি মস্তক ধর্ষণ
নালো সজনী
ঠাঁই ঠাঁই যত নারী
একে অন্য জনে ধরি
গায় গীত সবাই কৌতুহলে
নালো সজনী।
প্রায় ১৮৭৬ সালের এই লেখা কালজয়ী ভাষা ও সংস্কৃতির অঙ্গন হয়ে আছে। বাংলা ভাষার উৎকর্ষ সাধনে অনন্ত কৃষ্ণ ধর লাকসামের কোন এক অঞ্চল হতে যে পত্রিকা প্রকাশ করছেন তা জেলা গেজেটিয়ারে পাওয়া যায়। পত্রিকার নাম ছিল ’’নূতন আলো ’’ ইহা ফয়জুন্নেছার ও অনেক পূর্বেকার পত্রিকা ছিল। জেলা গেজেটিয়ারে ২১৬ পৃষ্টায় যা ছাপা হয়েছিল উহার কোন কপি আজও সংগ্রহ করা যায়নি। লাকসামের ভাষার ইতিহাস অনেক সমৃদ্ধ তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করতে হবে এবং আঞ্চলিক ভাষার উৎকর্ষ সাধনে তৎপর হতে হবে।
গাজীকালু চম্পাবতী, সোনাইবিবির গান, কবি গান, পালা গান, সীতা বিলাপ, আরোও কত কি গজল গান, গীত এ অঞ্চলের লোক মুখে গীত হত। গ্রামে গ্রামে জারীসারী গানের আসর বসত। ঢোল, কর্তাল, সারিন্দা, দোতারা, একতারা, খঞ্জনী এসব কত রকমের গানের সাথে বাজনার আগমন ঘটল। পুঁথির সাহায্যে পুঁথি পাঠের আসর বসত জমজমাট হয়ে। পাল্টা পুঁথির আসর বসত গ্রামে এবং এ জনপদের হাট-বাজারে লাকসাম কেন্দ্রিক গ্রাম্য সংস্কৃতির সঙ্গে পুঁথি পাঠ ও কবি গানের প্রচলন ছিল। বিয়ে-শাদীতে কবি গানের আসর বসত এবং উৎসব আয়োজনের অঙ্গনে ছড়ার কাটাকাটি হত অনেক উপভোগ্য। বিয়ে বাড়ীর বা কোন পূজো পার্বনে ভাব আদান প্রদানে পানের খিলির কদর ছিল। কে কত প্রকার পানের খিলি বানাতে পারে বা হুক্কাতে তামাক সাজাতে পারে তা দেখার বিষয় ছিল। আত্মীয় এলে প্রথমেই পান, পিড়ি অতঃপর তামাক জল পিড়িতে বসতে দেয়া একটা ঐতিহ্য ছিল।জমিদার বাড়ীতে নাটক, জারী-সারী, গানের আসর বসত, জমিদারেরা শিল্পীদেরকে উৎসাহ যোগাত এবং যাত্রা গানেরও কদর ছিল।
কাকড়ী ও ডাকাতিয়া নদী একসময় এ জনপদের উপর দিয়ে প্রবাহিত হতো। বর্তমানে নদী দু’টি পলি মাটিতে ভরাট হয়ে প্রায় পানিশূন্য হতে চলছে। লাকসাম জনপদের আরেক জন গীতি কবি প্রয়াত এস,এম হেদায়েত। স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর লেখার প্রভাব পড়েছিল অনেক।উত্তর লাকসামের হিন্দু ও বৌদ্ধদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় আচার আচরণ ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখছে।
পঞ্চাশের দশকে লাকসামে লেখক সংঘ গঠন করা হয়েছিল। উহার কার্যক্রম এখনও পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রয়াত অধ্যাপক বীরেন্দ্র কিশোর মজুমদার উহার বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। কবি আলাওলের উপর তাঁর লেখা সমাজে সমাদৃত হয়েছিল। নোয়াখালী রামচন্দ্রপুর কলেজের প্রফেসার ইব্রাহিম রহমত উল্ল্যা ও একজন বিশিষ্ট সদস্য ছিলেন। বর্তমান শিল্প সাহিত্যের গবেষক অধ্যাপক এহেতেশাম হায়দার চৌধুরী বর্তমানে নিমসার কলেজে আছেন। যারা লাকসামের সাহিত্য সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবদান রেখে যাচ্ছেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত উপচার্য প্রফেসর এম শামছুল হক, সংঘরাজ প্রয়াত জ্যোতিপাল মহাথেরো লাকসামের লোক।
নদ-নদী
লাকসামের উল্লেখযোগ্য ও একমাত্র নদী ডাকাতিয়া, এর উৎপত্তি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এবং কুমিল্লা জেলার উপর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চাঁদপুর জেলায় মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।ডাকাতিয়া নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০৭ কিলোমিটার। এটি লাকসাম পৌরসভা, বাকই, মুদাফ্ফরগঞ্জ, কান্দিরপাড় এবং গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদী চৌদ্দগ্রাম খাল এবং নোয়াখালী খালের সাথেও যুক্ত। এক সময় এ নদীই ছিল লাকসাম উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। বর্তমানেও সীমিত আকারে ডাকাতিয়া নদীর মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে মালামাল পার করা হয়। বর্তমানে এই ডাকাতিয়া নদীর পানি দ্বারা শীত ও গরমকালে কৃষিকাজ করা হয়। অধিকন্তু এই নদীতে বিভিন্ন প্রকারের অনেক সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়।শিক্ষা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
লাকসাম উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৭ টি, রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালযের সংখ্যা ০৯ টি, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৫টি, মাদ্রাসার সংখ্যা ১৮টি, ইন্টারমেডিয়েট কলেজ ০৫টি ও [ডিগ্রী কলেজ] ০২টি রয়েছে।অর্থনীতি
বর্তমানে লাকসামের শিক্ষার হার ৪৩.৮১%। মোট জনসংখ্যার ৩৪.০৫% কৃষি, ১১.২১% ব্যবসা, ১৩.৫৫% চাকরি, ৩.২৮% পরিবহন ১৯.০৮% কৃষি শ্রমিক, ৩.৭৭%অকৃষি শ্রমিক, ১.২১% নির্মাণ শ্রমিক এবং ১৩.৮৫% অন্যান্য পেশার উপর নির্ভরলশীল।লাকসাম উপজেলার প্রধান ফসল হলো ধান,আলু, বেগুন,টমেটো.শাকসবজি। যোগাযোগ ব্যবস্থায় রয়েছে পাকা রাস্তা ৬৮ কিঃমিঃ, আধা পাকা ১০ কিঃমিঃ, কাচা রাস্তা ২০০ কিঃমিঃ , নৌপথ ২৪ কিঃমিঃ, রেল পথ ৩০ কিঃমিঃ । শিল্প কারখানার মধ্যে সিগারেট ফ্যাক্টরী, চাউলকল তৈল কল উল্লেখযোগ্য।
পৌর এলাকাসহ লাকসাম উপজেলায় প্রায় ২৫ টি হাটবাজার রয়েছে। লাকসামে বরতমানে প্রায় ২০ টি অটো রাইচ ও ফ্লাওয়ার মিল, প্রায় ১০ টি সরিষার তেলের মিল, একাধিক সিগারেট ফ্যাক্টরিসহ শতাধিক ভোগ্যপণ্যের ফ্যাক্টরি রয়েছে।
কৃতী ব্যক্তিত্ব
লাকসামের কয়েকজন স্মরণীয় শ্রদ্ধাভাজনঃ১। নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ২। অতুল কৃষ্ণ রায় চৌধুরী ৩। নওয়াব বদরুন্নেসা চৌধুরানী ৪। মোল্লা কাজিমউদ্দিন ৫। পীর রজব আলী ৬। সংঘরাজ জ্যোতিপাল মহাথেরো
বিবিধ
লাকসাম জংশন
লাকসাম স্টেশন দেশের অন্যতম বৃহৎ জংশন। লাকসাম রেলওয়ে জংশন প্রায় ৩০০ একর সম্পত্তির উপর ১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে একসময় প্রায় ১৭০০ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করত। বর্তমানে রেলওয়ের দৈন্যদশায় ২০০ এর মত লোক কাজ করছে। লাকসাম জংশন স্টেশনে বর্তমানে বিরাট স্টেশন বিল্ডিংসহ ৪ টি প্ল্যাটফরম রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ২০ জোড়া ট্রেন লাকসামের উপর দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করছে।
লাকসাম জংশন
খেলাধুলা ও বিনোদন
লাকসাম স্টেডিয়াম লাকসাম জংশন এর খুব কাছেই অবস্থিত। একে কেন্দ্র করেই এ অঞ্চলের খেলাধুলার প্রসার হয়েছে। তাছারা আরো অনেকগুলো বড় মাঠ ছিল। সেগুলোর বেশিরভাগই বড় বড় দালানে ভরে গেছে ।লাকসামে দুটো সিনেমা হল আছে। পড়শী সিনেমা হল আর পলাশ সিনেমা হল । এগুলো বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে গেছে। তবে ব্যক্তিগত এবং দলগত ভাবে অনেকেই সংস্কৃতির চর্চা করে। এগুলো সাধারনত বিভিন্ন স্কুল-কলেজ কেন্দ্রিক।
No comments:
Post a Comment